বাংলাদেশ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নানাভাবে মিথ্যাচার করে আসছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, ঢালাওভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাচ্ছে সবাই।
এবার এই তালিকায় যুক্ত হলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন মমতা। সোমবার, রাজ্যের বিধানসভায় দেয়া ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া, ভারতের অনেক নাগরিক বাংলাদেশে বসবাস করেন উল্লেখ করে, কেন্দ্রীয় সরকার নরেন্দ্র মোদিকে, বাংলাদেশের প্রসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপেরও আহ্বান জানান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বক্তব্যের সময় তিনি আরও বলেন, কলকাতার ইসকন শাখার প্রধানের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। ইসকনের ওই নেতার প্রতি নিজের সহানুভূতি ও সমর্থন আছে জানিয়ে মমতা বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয়দের ওপর আক্রমণ হলে, তারা সেটি সহ্য করবে না। বাংলাদেশ থেকে ভারতের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন মমতা।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতি দাবি করেছেন মমতা।
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চুপ আছে বলেও অভিযোগ তোলেন মমতা। দেশটির শাসক দল বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, গত ১০ দিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে আছে।
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের চক্রান্ত করলেও, এমন অধিকার নেই তাদের। নিয়মানুযায়ী, সাধারণত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে জাতিসংঘ। জড়িত দেশগুলোর মধ্যে শান্তি চুক্তি হলে, তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেয় বিশ্ব প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি, যাতে শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে। এমনটাই মনে করছেন, দেশের সচেতন নাগরিকরা।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত চুপ রয়েছে, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদীত বক্তব্য দিলেও, বাস্তবতা ভিন্ন। পাঁচ আগস্টের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানাভাবে হস্তক্ষেপ করছে ভারত।
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে ফাঁসানো হচ্ছে দাবি করে গত শুক্রবার কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে সহিংস হামলা চালায় ভারতীয়রা।
এর আগে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত অপরাধীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসবের বিরুদ্ধে চিন্ময় দাস কথা বলায় মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি করে ভারত।
চিন্ময় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন বিজেপির বিধায়ক ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিজেপির ডাকে চিন্ময়কে মুক্তির দাবিতে পেট্রোপোল সীমান্তে সোমবার বিক্ষোভ করেছে ভারতীয়রা। এসময় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিভিন্ন বানোয়াট বক্তব্য দেন বিক্ষোভকারীরা।
গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে গত মঙ্গলবার আদালত চত্ত্বরে সহিংস হামলা চালিয়ে, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে চিন্ময়ের অনুসারীরা।
উগ্রপন্থী সাম্প্রদায়িক নেতা চিন্ময়কে গ্রেফতারের পর থেকেই, বাংলাদেশে অশান্তি তৈরির নানা পায়তারা করে যাচ্ছে ভারত।