ঢাকাসোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১০:০৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রক্ত চুষে কোটিপতি পিআইও লুৎফর

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৬, ২০২৪ ১১:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সরেজমিন অনুসন্ধান

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান, মাত্র দেড় বছর ধরে এ পদে পদন্নোতি পেয়ে যোগদান করেছেন। পদন্নোতি পেয়ে প্রথমে আলাদীনের চেরাগ, আলাদীনের চেরাগের পর প্রথম কর্মস্থল রাজীবপুর উপজেলাকে পেয়েছেন আলাদীনের চেরাগের সেই দৈত্য হিসেবে। যে দৈত্যকে সে যা বলেন তাই হয়। যোগদানের মাত্র দেড় বছরে নানান অনিয়ম দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সূত্র বলছে, গরীবের রক্ত চুষে ঢাকায় কিনেছেন তিনতলা ফ্লাট। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর আগে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সাব-এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত তিনদিন সরেজমিন ঘুরে মিলেছে এসব অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা। দেখা গেছে, ইজিপিপি এর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ৩-৪ জন উপকার রোগীরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ভুল তথ্যের কারণে তাদের ঘাম ঝড়ানো পাওনা টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে এসব ভুলের দায়ভার নিতে নারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান।

প্রকল্প সভাপতির সাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাৎ: অভিযোগ রয়েছে সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের সেকান্দার আলীর বাড়ি থেকে মিয়াপাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ দেড় লক্ষ্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে। রাস্তার কাজ না করেই সেই প্রকল্পের সভাপতি সদর ইউপি সদস্য আব্দুল হাই এর সাক্ষর নকল করে পুরো অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান। এবিষয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হাই বলেন, আমি কোনো বিল (টাকা) পাই নাই। বিলের জন্য কোনো কাগজে সাক্ষরও করি নাই। সে আমার সাক্ষর নকল করে দুই দফায় ৭৫ হাজার করে পুরো টাকাটাই তিনি (পিআইও) আত্মসাৎ করেছেন। যার প্রথম বিল নং-৫৫৯ ও দ্বিতীয় চেক নং-৭৯০৭৪১৪। প্রথম বিল ক্যাশ করেছেন ২০২৩ সালের ১৪ মার্চে এবং দ্বিতীয় চেকটি ক্যাশ করেছেন ২১ জুন ২০২৩ সালে। তবে এবিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি তিনি বিল দিয়ে দিয়েছেন।

গরীবের বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ: ২০২৩ সালে তৎকালীন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মানবিক সহায়তা (জিআর) এর পাওয়া বরাদ্দ ২০ অসহায় দরিদ্র ব্যক্তি পরিবারকে ২২ বান্ডিল ঢেউটিন ও তিন হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সব-কটি পরিবার ঢেউটিন পেলেও পাননি তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কোনো টাকা। এবিষয়ে কথা হয় সদর ইউনিয়নের কলেজ পাড়া এলাকার সেকান্দার আলী ও রহিমা খাতুনের সঙ্গে তারা বলেন, আমরা এক বান্ডিল করে টিন পেয়েছি কিন্তু আমাদের জন্য যে তিন হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল সেটা পিআইও দেয় নাই। চাইতে গেলে সে (পিআইও) বলে টাকা ফেরত গেছে। একই কথা বলেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা পর্বত আলী-হাসিনা দম্পতি।

ইজিপিপি এর অর্থ আত্মসাৎ: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ননওয়েজ প্রকল্পের এক লাখ ৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। তথ্য বলছে, ননওয়েজ খাতের বরাদ্দ থেকে প্রথম পর্যায়ে ২৭টি ওয়ার্ড ও দ্বিতীয় পর্যায়েও ২৭টি ওয়ার্ডের প্রকল্প সভাপতির অনুকূলে ২হাজার করে টাকা সর্বমোট ১ লাখ ৮হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এবিষয়ে কোদালকাটি ইউপি সদস্য মাসুদ রানা ও বায়েজিদ ইসলাম এর সাথে হলে তারা বলেন, আমরা এমন বিল সম্পর্কে আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আমরা এমন কোনো বিল পাই নাই। কথা হয় মোহনগঞ্জ ইউপি সদস্য মাসুদ ও আলম এর সঙ্গে তারাও কোনো টাকা পাননি বলে জানান। ইউপি সদস্যরা টাকা না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে লুৎফর রহমান বলেন, এটা মূলত কাগজ,কলম ও ফটোকপি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সব কিছু তো অফিস থেকেই করা হয় এজন্য এই অর্থটা অফিসে যারা আছে তারাই এটা নেয়।

ফারুক সিন্ডিকেট: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য জানান, বর্তমানে গোটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস চলছে এই ফারুক সিন্ডিকেটেই। তিনি সব প্রকল্প সভাপতির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বিল পাওয়ে দেন বলে জানা গেছে। ঘুষ না দিলে বিল দিতে গড়িমসি করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান। সোর্স বলছে, বাহিরের লোক হয়েও ২০২২-২৩ অর্থবছরের পর থেকে ব্যাংক থেকে যত প্রকল্প বিল উত্তোলন করা হয়েছে সমস্ত বিল উত্তোলন করেছেন এই ফারুক। ইদানীং আউটসোর্সিং প্রকল্প থেকে নিয়োগ পাওয়া আমিনুল ইসলামকে দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করছেন পিআইও লুৎফর রহমান। সূত্র জানায়, ফারুক আমিনুলের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে শতকরা ৩০শতাংশ অফিস খরচ (পিসি) বাবদ কেটে নিয়ে প্রকল্প সভাপতিদের বিল বুঝিয়ে দেন পিআইও। তিনি কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছা মতো লোক দিয়ে চেক ক্যাশ করান বলে জানান একাধিক সূত্র।

তার এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের শাস্তি দাবি জানান ওই সব প্রকল্প সভাপতি ও স্থানীয়রা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।