ঢাকাসোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রৌমারীতে খাদ্যগুদামে সিন্ডিকেটে ঢোকে ধান,বঞ্চিত প্রকৃত কৃষকরা

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিবেদক
অক্টোবর ১৪, ২০২৪ ৫:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের অংশ মধ্যস্বত্বভোগীরা ধান ক্রয় করছে। এতে করে ধান উৎপাদনকারী প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে সরকারের স্বদিচ্ছা ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যগুদামের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় ১০-১৫ জন মধ্যস্বত্বভোগীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের মাধ্যমে ক্রয় করা হয় এসব ধান। সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্যের সত্যতাও পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নামে-বেনামে ধান ক্রয় এর নামে আবেদন দেখানো হয়। আসলে প্রকৃত কৃষকরা আবেদনই করেনি। তথ্য রয়েছে কৃষকের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে আবেদন করেন একটি সিন্ডিকেট। লটারিতে দেখা গেছে প্রায় অধিকাংশ নামই অকৃষক। ধান ক্রয় লটারি কবে হবে, কি ভাবে হবে, কোনো প্রকার প্রচার প্রচারণা ছাড়াই এসব কাজ করা হয়। তথ্য যাছাই করে দেখা গেছে, অধিকাংশ নাম যাদের কোনো প্রকার ধান কিংবা চাষাবাদের জমি নেই। তাহলে লটারিতে যাদের নাম আছে তারা কি ভাবে ধান দিবে। অপর দিকে প্রায় সব ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সিন্ডিকেটের মুল হোতারা এসব ভুয়া নামে আবেদন দেখিয়ে সব নামের ধান গুদাম কর্মকর্তার সাথে জোগসাজস করে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান দিয়ে থাকেন। এদিকে যে সব ধান ক্রয় করা হচ্ছে নিয়ম অনুযায়ী মেইলারদের মাধ্যমে ধান মাড়াই করে আবার গুদামে দেওয়ার কথা থাকলেও তা না করে ধান বিক্রি করে ভিন্ন জেলার রাইস মেইেল থেকে চাউল কিনে আনেন। রৌমারীতে প্রায় সব চাল কল গুলো বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।

অপর দিকে রৌমারী খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ যোগদানের পর থেকে স্থানীয় এক বস্তা ব্যবসায়ীর সাথে যোগ সাজসে গুদামের পুরাতন ও নতুন বস্তা বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তিনি যোগদানের পর ওই বস্তা ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে বস্তা বিক্রি করবেন বলে প্রস্তাব দেন। তার পর চলতে থাকে তার এই ব্যবসা। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই বস্তা ব্যবসায়ীর পাওনা অগ্রীম ২০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে এক ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে কিছু টাকা দিলেও বাকি টাকা দিবেন না বলে জানান। অপর দিকে বিশ্ব্য খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ভিজিডি সুবিধাভোগী পরিবারকে যে খানে ৩০ কেজি চাউল দেওয়ার কথা সেখানে সুবিধাভোগী সদস্যরা পায় ২৮ কেজি করে। কৃষককে মান যাচাই এর নামে করেন হয়রানি। কৃষক নয় ,ধান কেনেন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এসব অনিয়মের সাথে সরাসরি রৌমারী খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিএলএসডি জরিত।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯ শত ৬৬ মেট্রিক টন এর স্থানে অর্জন হয় ৬ শত ২১ মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাল মূল ও অতিরিক্তসহ ১ শত ১০ এর স্থানে ১০৪ মেট্রিক টন সংগ্রহ। আতব চাউল ১ শত ৩০ এর স্থানে ৭০ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়। উদ্বোধন করা হয়েছে ২২ মে। ধান, চাউল সংগ্রহের সময় শেষ হয় ৩১ আগস্ট। সরকারি মূল্য অনুযায়ী প্রতি মন ধান ১২ শত ৮০ টাকা। একজন কৃষক ৩ টন ধান দিতে পারবে। উপজেলা থেকে লটারির মাধ্যমে ৩ শত ২২ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়েছে।

স্থানীয় মিজানুর রহমান নামের এক বস্তা ব্যবসায়ী সাথে কথা হলে তিনি জানান, খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ রৌমারীতে যোগদানের পরে আমাকে ডেকে নিয়ে বস্তা বিক্রির কথা বলেন। তার পর থেকে নিয়মিত তিনি আমাকে সরকারি বস্তা দিতেন বিনিময়ে নিতেন টাকা। হঠাৎ একদিন ২০ হাজার টাকা অগ্রিম নেন সেই মাল চাইতে গেলে অস্বীকার করেন। এই টাকা চাইতে গেলে মামলাসহ নানা প্রকার হুমকি দেন। পরে স্থানীয় লোক জনের চাপে সামান্য কিছু টাকা দিলেও অধিকাংশ টাকা আটকে রাখেন।
খেওয়ারচর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, ধান সংগ্রহ তালিকায় নাম থাকলেও ঘুষ না দেওয়ায় ধান নিতে ঘড়িমশি করেন।

উপজেলার আতাহার আলী নামের একজন কৃষক জানান, টনের পর টন ধান আমার ঘরে পড়ে থাকে। আমি গুদামে ধান দিবো বলে অপেক্ষা করছি হঠাৎ শুনি লটারি হয়েছে। কি ভাবে এসব করল তা কোনো ভাবে জানলাম না। এটা খুবই দুঃখজনক। এ খানে বড় সিন্ডিকেট আছে ধান দেওয়া মুশকিল।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রৌমারী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এখানে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেওয়া হচ্ছে। কোনো সিন্ডিকেট নেই। উপজেলায় চাল কল গুলো অবস্থা খারাপ তবে সংস্কারের দরকার।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হাসনাত মোহাম্মদ মিজানুর রহমান অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে একাধিক বার কথা বলার চেষ্ঠা করেও সম্ভব হয়নি।
উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আনিসুল ইসলাম সাথে কথা হলে তিনি জানান, এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।