কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সিজি জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আবু হোরায়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদটিকে যেন আলাদিনের চেরাগ বানিয়ে তিনি বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, টিউশন ফি, ভর্তি ফি, এসএসসি ফরম পূরণের অতিরিক্ত অর্থ আদায়, উপবৃত্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া, সনদপত্র ও প্রশংসাপত্র প্রদানের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়মের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের বাজারের মার্কেট ভাড়া ও জামানতের অর্থ আত্মসাৎ, বাংলালিংক টাওয়ারের ভাড়া এবং প্রতিষ্ঠানটির গাছ লিজ দিয়ে নিজের জন্য ব্যবহার করা এসব অভিযোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
২০০১ সালে গ্রহণের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে এসএসসি ফরম পূরণে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া, সেশন ফি ও ভর্তি ফি-এর টাকা নয়ছয় করে আত্মসাতের অভিযোগ। এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকে সরকারি করণের নামে ২০ হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। গোপনে বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই দ্বিতীয় শিফটের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য ৮-১০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা শিক্ষার্থীদের ৩-৪ বছরের উপবৃত্তি বন্ধ রাখেন এবং করোনাকালীন প্রণোদনার অর্থও আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া এমএলএসএস পদে অবসরে যাওয়া এক কর্মচারীর ইনডেক্স নম্বর জালিয়াতি করে বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি ২০০৫ সালে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জালিয়াতির অভিযোগে নিয়োগ বাতিল করা হয়। ২০১২ সালে সরকারি বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিক্রির সময় হাতে নাতে ধরা পড়েছিলেন আবু হোরায়রা। ২০০৪ সালে সিজি জামান স্কুলে পরিচালিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রোগ্রাম তার অনিয়মের কারণে অন্য স্কুলে স্থানান্তরিত হয়।
স্থানীয় ছাত্র-জনতা গত ১৮ আগস্ট তার পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করে এবং ২২ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বৈধ উৎস না থাকা সত্ত্বেও বিলাসবহুল বাড়ি ও অঢেল সম্পদ গড়ে তোলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গুণগত মান নিশ্চিত না করে কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্যকে সমর্থন করা।
আবু হোরায়রা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, “আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কিছু শিক্ষক ও কর্মচারী মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। যদি তদন্তে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, আমি সঙ্গে সঙ্গেই পদত্যাগ করব।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, তাদের নিয়োগের সময় টাকা ছাড়া চাকরি হয়নি। শিক্ষকদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান ওই সব শিক্ষক।
ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।