সরকারকে বেকায়দায় ফেলে পুনর্বাসিত হওয়ার ছক কষেই চলেছে আওয়ামী লীগ। নানা পরিকল্পনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে দলটি। ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনাসহ নেতৃত্বের বড় একটি অংশ পালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবিপ্লব নিয়ে মাঠে সক্রিয় আছে দেশের অভ্যন্তরে থাকা আওয়ামী লীগের সদস্যরা। সার্বিক বিষয়ে নির্দেশনা আসছে ভারত থেকে। সেখানে অবস্থান করেই সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে আওয়ামী লীগ নেতারা।
বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার নামে ঢাকা দখলের পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের পুরনো কৌশল। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের এপ্রিলেও বেসরকারি সংস্থা প্রশিকার কর্মী ও ক্ষুদ্রঋণভোগীদের সম্মেলনের নামে ঢাকা দখলের পরিকল্পনা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেবার আর সফল হতে পারেনি। এবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ব্যানারে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ঢাকামুখী লং মার্চের পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।
এর আগে, গেল আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের তিন সপ্তাহ না যেতেই আনসারদের মাধ্যমে সচিবালয় এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। সচিবালয়ের পাশে জমায়েত করেছিল সাধারণ আনসার সদস্যরা। এরপর কখনো সংখ্যালঘু, কখনো গার্মেন্টস শ্রমিকের বেশে রাজধানী ঢাকা দখলের চেষ্টা করা হয়েছে; আর এর নেপথ্যে ইন্ধন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে আওয়ামী লীগের এসব পরিকল্পনার কোনটিই এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। এবার নভেম্বরকে লক্ষ্য করে নতুন ছক কষেছে দলটি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মচারীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে তারা। ইতিমধ্যে পবিস কর্মচারীদের মধ্যে নানা দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের (১৮-২৮ অক্টোবর) কোন একদিন এই লং মার্চের ডাক দেওয়া হবে। তার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনেকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিফলেট ও মেসেজ (বার্তা) পাঠানো হয়েছে। সবাইকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশে অগ্রিম যাতায়াত খরচ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাইকে লং মার্চে যোগ দেওয়ার জন্য দলটির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ১৮-২৮ অক্টোবর সময়ে দেশে পরিকল্পিতভাবে লোডশেডিং তৈরির পরিকল্পনা করছে এই গোষ্ঠীটি। যাতে করে তাদের লং মার্চের সময় সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়। সাধারণ মানুষের এই ক্ষুব্ধতার সুযোগ নিয়ে সাধারণের বেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও ওই লং মার্চে আনার পরিকল্পনা করছে দলটি।
ভারতের কলকাতা থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর দুই কর্মকর্তা পুরো পরিকল্পনাটির তদারকি করছে বলে জানতে পেরেছে দ্য মিরর এশিয়া।
বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা দ্য মিরর এশিয়াকে জানিয়েছেন, নতুন এই পরিকল্পনার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন পবিসের এক সহকারী সাধারণ ব্যবস্থাপক (এজিএম)। ওই এজিএমের নেতৃত্বে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে নানা গুজব উস্কে দেওয়া হচ্ছে। অস্থিরতা তৈরির জন্য ভারতের শিল্পগ্রুপ আদানি অর্থায়ন করছে বলে জানতে পেরেছে দ্য মিরর এশিয়া।
জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী একচেটিয়া যে চুক্তি আদানির সাথে শেখ হাসিনা সরকার করেছে তা পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটি জানতে পেরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুত খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে আদানি। আর এতে মূল ভূমিকায় রয়েছেন ওই এজিএম।
বাংলাদেশের ওই গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, শুধু ভারতের আদানি গ্রুপই নয়, দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরির নতুন এই পরিকল্পনায় সহায়তা করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)।
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এরইমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) জন্য অভিন্ন সার্ভিস কোড চালু ও একীভূত করার দাবির যৌক্তিক সমাধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। লাইন ক্রুদের নিয়মিত শূন্য পদের বিপরীতে নিয়মিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পবিসের সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন করা হয়েছে এবং ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা কার্যকর করা হয়েছে।